রবিবার ● ১৩ জুলাই ২০২৫ ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
×
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
কমালিকা
প্রকাশ : শনিবার, ২১ জুন , ২০২৫, ০৭:১২:০০ এএম
নূরনাহার নিপা:
default.png

কমালিকা
নূরনাহার নিপা

অল্প বয়সে বিধবা হয় কমালিকা। অনিকের ক্যান্সার হবার পর, তাকে অনেক চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেনি। কমালিকা রাতদিন এক করে মানুষের কাছে টাকা ধার নিয়ে জায়গা বন্ধক রেখেও অনিককে বাঁচাতে পারলো না। দুই বছরের কন্যাকে বুকে চেপে ধরে সেদিন বাড়ি কাঁপিয়ে কেঁদেছিল কমালিকা। অসময়ে বিধবা হবার শোক সহজে মানতে পারেনি। বিধবা হবার পর কমালিকা প্রতি পলকে পলকে পরখ করেছে কঠিন বাস্তবতার কুৎসিত রূপ। অথচ অনিক থাকতে কত সুখের দিন ছিল তাদের। এখন কোনো রকমে জীবন ধারণ করে। সেটা আর তাদের হলো না। দোকানটাও দখল হয়ে গেল। শ^শুরবাড়ির সবাই যা বলবে তা মেনে নিতে হয়। কথা বলার সময় ননদের মুখে কিছু আটকায় না। অনিক চলে যাবার পর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা অবহেলায় ছুঁড়ে ফেলে কমালিকাকে। তার ওপর অল্প বয়সে অনিকের মৃত্যুর জন্য কমালিকাকে দোষারুপ করে, অলক্ষুণে স্বীকৃতি দেয়। কমালিকা অনিকের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদে আবেগ উকন্ঠে বলে অনিক, শুনি না তোমার সে ডাক কমালিকা! কমালিকা!... বিশ্বাস করো, তোমার প্রতি আর কোন অভিযোগ নাই। কোন অভিযোগ জমা রাখে নি। শুধু চাই তুমি পরপারে ভালো থাকো, অনেক ভালো। তুমি চলে যাবার পর সব সুখ একটু একটু করে চলে গেল। মেয়েটারে নিয়ে হয়ছে যত জ্বালা! রাতে খুব জ্বর, সারারাত ঘুম হারাম। এখন একটু ঠিক আছে! এইটুকু মেয়ে তার তো মন কাঁদে। কোথায় যাব, তোমার ভিটা যে আমার শেষ ঠিকানা। যে যা বলুক, আমি তোমার স্মৃতি নিয়ে ঘরের এক কোণে পরে থাকবো ঋতিকাকে নিয়ে। আমাকে অপয়া ডাকুক সবাই। তাতে আমি কিছু মনে করি না। তুমি জানো, তোমার জন্যে কত চেষ্টা করছি মানুষের দুয়ারে গেছি টাকার জন্য, এতকিছুর পরও তোমাকে বাঁচাতে পারলাম না।
ঋতিকাকে কোলে নিয়ে গুমরে কাঁদে কমালিকা। আবার অনুভব করল যে বিধবাদের জীবন এত সরলরৈখিক নয়। তারপর শ^শুরবাড়ির কটাক্ষ কথার বিষাক্ত ছোঁবল সাপের চেয়ে ভয়ঙ্কর। এমন সময় শোক বুকে বয়ে বেড়ায়ানো হৃদয়টা ক্ষতবিক্ষত করতে থাকে ্র
প্রতিনিয়ত। একটা সময়ে এসে ছোট দেবর অপু কমালিকার প্রতি উদারতার কোনো কমতি রাখেনি। সেটাতো সমাজ ভালো চোখে দ্যাখে না। ভরা যৌবন কমালিকার। লালসার চোখ উপড়ে দেবর অপু। সময় অসময় কাছে আসতে চায় কমালিকার। কমালিকা অপুকে বারবার সাবধান করে, ঋতিকাকে নিয়ে কোথায় যাবে, সব কথা তার বড়ো জা নাইমাকে বলে, কান্নাভেজা চোখে নাইমা কমালিকাকে শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে বলে, বাবার বাড়িতে কিছুদিন থাকতে পরামর্শ দেয়, মানসিক শান্তি ও শক্তি সঞ্চয় করতে পারবে। নিত্যদিনের কাজে চলে আসতে পারে ভিন্নতা মনও ভালো থাকবে। কথাগুলো কিছুটা হলেও কমালিকার মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম এবং স্বস্তি পেল মনের ভিতর। কিন্তু এখানেও যেন ভাগ্য কমালিকার সাথে প্রতারণা করে। এক নরক থেকে এসে আরেক নরকে। বাবার বাড়ির অবস্থা ভালো, তবুও ভাইয়ের বউয়ের কথার টকঝালের গল্প অনিশ্চিত জীবনের দিকে ঠেলে দেয় বারবার। মা, বাবা দুজনে মারা যায় অনেক আগেই। ভাই তার একমাত্র ভরসা, বাবার মতো দেখাশুনা ও খোঁজ খবর রাখে, কিন্তুু ভাইয়ের বউয়ের সে কী রাগারাগি কমালিকা যেন মহাবিপদে পড়ে গেল। ভাইয়ের কঠিন অসুখ, ভাইয়ের অসুখে এমনভাবে হোঁচট খেল, যেন আর উঠে দাঁড়াতে পারবেনা।

ভালো মন্দ সবকিছু ভাই পরামর্শ দিতো সাহস দিতো, কমালিকা ভাইয়ের কথায় শক্তি সাহস পেতো, আজ ভাইয়ের এমন অসুখে কিছুই করতে পারছে না। ভাইয়ের জন্য বুকটা পাথর ভাঙার মতো শব্দ করে, আহা! জীবন এত নিষ্ঠুর ক্যান? আজ কমালিকার নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হয়। তবুও জীবন থেমে থাকে না। জীবন চলে, স্থির হয়ে যায়নি জীবনের গতিপথ। নির্লজ্জের মত অন্ন ধ্বংস করার পক্ষে না আয়ের পথ খুঁজে নেয় কমালিকা। যেটুকু লেখাপড়া আছে তাতে টুকটাক কাজ করা যাবে, পথে এর ওর কাছে জিজ্ঞাস করতে করতে এগিয়ে যায় পাহাড়পুর থেকে জায়গাটিতে হেঁটে আসতে বেশ পরিশ্রম হয়েছিল, তবে রোদের নরম আলো খালি পায়ে গাঁয়ের পথে হাঁটতে ভালো লাগে। রাস্তার পাশে দোকানে এক আপার সাথে পরিচয় তার ছোট একটা হোটেল। তিনি মন দিয়ে কমালিকার কথাগুলো শুনলো, আপাতত তার চা বাগানে কাজ করতে বলে, কমালিকা কাজ পেয়ে গেল অপ্রত্যাশিতভাবে। এই সুযোগটা লুফে নিয়ে কাজ শুরু করে দিলো বিস্তৃত চা বাগান অদ্ভুত সুন্দর, জায়গাটাও মনোরম, চা বাগান দেখে ভয় ভয়ঙ্কও শ্রেফ উবে গেল। কমালিকা সকালে কাজে আসে, বিকেলে ফিরে যায়। ঋতিকার কাছে মনটা পড়ে থাকে। যদিও বাড়িতে ছোট্ট ঋতিকা নিরাপদ এবং সে ব্যাপারে কমালিকার কোনো সন্দেহ নেই। তাকে সবাই আদর করে তবুও মায়ের মনতো একটু আকুপাকু করবেই। কমালিকা গাধা খাটনি খাটানোর পরও মাস শেষে টাকা নেয়, তার কাজে যথেষ্ট খুশি সবাই। কিছু টাকা নাহিদার হাতে তুলে দেয়। ভাবী নাহিদার আর্থিক সংকট যেন ফুরায় না। সামনে শীতকাল। ঋতিকার গরম কাপড় নেই। তাই কিছু টাকা নিয়ে মার্কেটে গিয়ে মেয়ের জন্য কাপড় কিনল। নাহিদা, আবার নতুন করে বিয়ে করতে বলে কমালিকাকে। কমালিকা কেন! তোমরা তো টাকা পাচ্ছ তাহলে। নাহিদা বলে, ছেলে বড়লোক অনেক টাকার মালিক। তোমার আর চিন্তা নেই। কমালিকা, আমি আর বিয়ের কথা শুনতে চাই না। আমার মেয়েকে ভালোভাবে মানুষ করার দায়িত্ব আমার, সে ভালো ইশকুলে পড়বে তাকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। বড়লোকদের মতিগতি বোঝার জ্ঞান কমালিকার নেই।

এবারে শীত পড়েছে প্রচুর। এই শীতের ভোরেও কাজ করতে আসতে হয় কমালিকাকে। ঋতিকা আস্তে আস্তে বড় হয়, ইশকুলে যায়, পড়াশুনায় বেশ ভালো। আনন্দে চোখ চকচক করে উঠল কমালিকার। সন্ধ্যার পর বাড়িতে এসে দ্যাখে মেয়ের জ্বর। ঋতিকার সারা শরীর ফুলে ওঠে। প্রচন্ড এলার্জি বাড়ে এবং ক্রমান্বয়ে শরীর লাল ছোট ছোট বর্ণ ধারণ করে। মেয়ের এমন পরিস্থিতি দেখে দিশা হারায় কমালিকা। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। ঋতিকার সারা শরীর যেন ব্যথা ও জ্বালা বেড়ে যাচ্ছে। মেয়ের একধরনের আহাজারি কমালিকাকে অস্থির করে তুলছে। কি করা যায় এখন! হাসপাতালে নিতে হবে। মেয়ের এমন ছটফটানি দেখে ঘরেও থাকা যাচ্ছে না। কমালিকা কি করবে বুঝতে পারছে না।

ঋতিকা এখন হাসপাতালে। আগের চেয়ে অনেক ভালো। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, ঋতিকা বিছানা থেকে ওঠে ওয়াশরুমে যায়। কমালিকা, ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে খেতে বসে। মেয়ের জন্য অপেক্ষা করার মতো সময় হাতে নেই। প্রতিদিনকার মতো ছুঁটতে হয় কাজে! কমালিকা কখনো কাজে ফাঁকি দেয় না তাই তার প্রমোশন হয়ে গেল! কমালিকা আস্তে আস্তে সুখের মুখ দ্যাখে। ঋতিকাও বড়ো হলো, এখন সে ডাক্তারি পড়ে। কমালিকার, আনন্দে চোখে জল যেন সর্ষের ফুলে, বসন্ত এসেছে প্রাণে প্রাণে।#

 

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝